-মোঃ নাছির আহাম্মেদ (প্রবাসী সাংবাদিক)
-বাংলাদেশে ১৫ই আগষ্ট একটি স্মরণীর দিন সকল দল ও মতের লোকদের কাছে, এক এক দলের লোকদের কাছে এক এক রকম গুরুত্বপূর্ণ, কারো কাছে শোকের,কারো কাছে প্রেরণা,চেতনার-বিপ্লবের আবার কারোর কাছে আনন্দের দিন।
বাংলাদেশের প্রধান তিন রাজনৈতিক দল দিনটিকে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন দিবস হিসেবে পালন করে,ক্ষমতাসীন আ’লীগ দিনটি পালন করে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে, বিএনপি পালন করে বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিন হিসেবে, আর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামি ছাত্রশিবি সহ কয়েকটি ইসলামি ছাত্র সংগঠন দিনটি পালন করে ইসলামি শিক্ষা দিবস হিসেবে।
💠ঘটনা প্রবাহের ভিত্তিতে প্রথমেই আসে ছাত্রশিবির সহ কয়েকটি ইসলামি ছাত্র সংগঠনের “ইসলামি শিক্ষা দিবস”
পাকিস্তান শাষনামলে সর্বশেষ শিক্ষা কমিশন গঠন করা হয় ১৯৬৯ সালে । এতে শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শিক ভিত্তি কি হবে, তা নিয়ে জনমত জরিপের আয়োজন করা হয় । এর অংশ হিসেবে সরকারের পক্ষ থেকে ১৯৬৯ সালের ২ আগষ্ট এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয় । এই সময়ে বামপন্থী ও ইসলামবিরোধী সংগঠনসমূহ এই শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে । এই আলোচনা সভায় বামপন্থীদের বিরোধীতামুলক বক্তব্যের মধ্যে শহীদ আব্দুল মালেক মাত্র ৫ মিনিট বক্তব্য রাখার সুযোগ পান । অসাধারন মেধাবী বাগ্মী আব্দুল মালেকের সেই ৫ মিনিটের যৌক্তিক বক্তব্যে সভায় উপস্থিত ছাত্রদের মোটিভ পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায় । উপস্থিত শ্রোতারা আব্দুল মালেকের বক্তব্যের সাথে ঐক্যমত্য পোষণ করে । আব্দুল মালেকের ত্বত্ত্ব ও যুক্তিপূর্ণ সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ক্ষিপ্ত করে দেয় ইতোপূর্বে বক্তব্য রাখা ইসলাম বিরোধী বক্তাদের ।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ইসলামী শিক্ষার পক্ষের জনমতকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে টি.এস.সি. তে ১২ আগষ্ট আয়োজন করা হয় আরেকটি আলোচনা সভার । বামপন্থী শিক্ষকরা এখানে শহীদ আব্দুল মালেক ও তার সংগীদের আসতে বাধার সৃষ্টি করে । কিন্তু যেভাবেই হোক আব্দুল মালেক সভায় উপস্থিত হন । ডাকসুর সভায় সাধারন ছাত্রের কথা বলার অধিকার আছে । শহীদ আব্দুল মালেকসহ কয়েকজন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে কথা বলার আবেদন করলে তা প্রত্যাখ্যান করা হয় ।
একচেটিয়া বক্তব্যমঞ্চ দখল করে ছাত্র ইউনিয়নের নেতারা বক্তব্যের ভাষা ধীরে ধীরে ইসলামকে আক্রমণ করে দেয়া শুরু করে । এসময় মস্কোপন্থী এক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা ইসলাম সম্পর্কে চরম আপত্তিকর বক্তব্য রাখতে শুরু করলে অনুষ্ঠানের উপস্থিত ইসলামপ্রেমী ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায় । যুক্তি ও বান্তবতার লড়াইয়ে পরাজিত বাম ও ধর্মনিরপেক্ষ গোষ্ঠী ক্ষিপ্ত হয়ে আক্রমন চালায় ছাত্রদের ওপর ।
সকল সংগীকে নিরাপদে বিদায় দিয়ে শহীদ আব্দুল মালেক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) পাশ দিয়ে যাবার পথে লোহার রড-হকিষ্টিক নিয়ে তার ওপর ঝাপিয়ে পড়ে ধর্মনিরপেক্ষ ও বাম ছাত্ররা । রক্তাক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ছাত্র আব্দুল মালেক । তিনদিন পর ১৫ আগষ্টে শাহাদাত বরন করেন ইসলামের এই মহান বক্তা।
এর পর থেকেই ১৯৭০ সাল থেকে ১৫ই আগষ্ট ইসলামি শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করে আসছে ইসলামি ছাত্র সংগঠনগুলি।
💠এর পরেই রয়েছে বাংলাদেশ আ’লীগের শোক দিবস
সময় ১৯৭৫ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের রাষ্ট্রপতি তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৫ই আগষ্ট রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসাতে কিছু বিদ্রোহী সেনা কর্মকর্তা/সদস্যের হাতে স-পরিবারে নিহত হন শেখ মুজিবুর রহমান, তার পর থেকে নানা নাটকীয়তার/ক্ষমতার পালাবদলের পর ১৯৯৬ সালে আ’লীগ ক্ষমতায় আসে, এর পর থেকেই ১৫ ই আগষ্ট শোক দিবস ও জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আ’লীগ ও এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলি।
(বঙ্গবন্ধুর হত্যার ইতিহাস সকলেরই কম বেশি জানা আছে তাই বিস্তারিত না লিখে সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে)
💠এর পরেই রয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্মদিন।
বিএনপি নেত্রীর বেশ কয়েকটি জন্মদিনের তথ্য পাওয়া যায়। তিনি যখন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন, তখন তার দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে যে তথ্য পাঠানো হয়েছিল, তাতে ১৫ আগস্ট জন্মদিনের কথা উল্লেখ ছিল না।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন করতে শুরু করলে খালেদা জিয়াও সেদিন তার জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট তার জন্মদিন উদযাপন শুরু করেন। তবে ২০১৫ সাল থেকে আর কেক টাকা হয়নি
আওয়ামী লীগ সে সময় থেকেই এর তীব্র সমালোচনা করে আসছে। তাদের অভিযোগ, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিনে আনন্দ করতেই বিএনপি নেত্রী বানোয়াট জন্মদিন পালন করেন।
বিএনপি এই সমালোচনা গায়ে না মাখলেও ২০১৫ সাল থেকে ১৫ আগস্টে কেক কাটা থেকে বিরত থাকে। তবে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হতো। তবে গত দুই বছর ধরে তাও হচ্ছে না। একদিন পিছিয়ে ১৬ আগস্ট নানা কর্মসূচি পালন করছে তারা।
পাঁচটি জন্মদিনের তথ্য
বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন নিয়ে ধোঁয়াশা দীর্ঘ দিনের। তার একাধিক জন্মদিনের খোঁজ পাওয়া যায়। সঠিক তারিখ নির্ধারণে আদালতে একটি রিট করা হয়।
এতে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার একাধিক জন্মদিন নিয়ে ১৯৯৭ সালে দুটি জাতীয় দৈনিকে পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর এসএসসি পরীক্ষার মার্কশিট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ ১৯৪৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।
১৯৯১ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে একটি দৈনিকে তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জন্মদিন ১৯৪৫ সালের ১৯ আগস্ট লেখা হয়। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বিয়ের কাবিননামায় জন্মদিন উল্লেখ করা হয় ১৯৪৪ সালের ৪ আগস্ট।
২০০১ সালে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অনুযায়ী, তার জন্মদিন ১৯৪৬ সালের ৫ আগস্ট।
উপরোক্ত তিনটি ঘটনাকে কেন্দ্র করেই মূলত বাংলাদেশের তিনটি রাজনৈতিক দল দিনটিকে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালন করে আসছে।
আরো পড়ুনঃ